Crab fattening
বাংলাদেশের উপক‚লীয় অঞ্চলের ১১ প্রজাতির কাঁকড়ার মধ্যে মাড ক্রাব বা শীলা কাঁকড়া বানিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি। এই
অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, আমিষের চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান তৈরি এবং বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন
করছে কাঁকড়া সাব-সেক্টর। আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যপক চাহিদা ও বাজার মূল্য থাকায় বাংলাদেশের উপক‚লীয় অঞ্চলে কাঁকড়া চাষীর
সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেবলমাত্র বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের চাষীরা বছরে প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন কাঁকড়া উৎপাদন করে এবং
সুন্দরবন অঞ্চলের মোহনা, নদী এবং খাল থেকে আহরিত আরও ২৫ হাজার মেট্রিক টন কাঁকড়াসহ প্রায় ৩৭ হাজার মেট্রিক টন কাঁকড়া
উৎপাদিত হয় যা বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। কাঁকড়া রপ্তানির মাধ্যমে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৪২.৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে। আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মানস¤পন্ন কাঁকড়া উৎপাদন করার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট
জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ওয়ার্ল্ডফিশ বাংলাদেশ এর ফিড দ্যা ফিউচার বাংলাদেশ অ্যাকোয়াকালচার অ্যান্ড
নিউট্রিশন অ্যাক্টিভিটি প্রকল্পের অর্থায়নে নওয়াবেঁকী গণমূখী ফাউন্ডেশন (এনজিএফ)- এর Promotion of Sustainable Crab Farming in South-West Region of BangladeshÓ” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই পুস্তিকাটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
১. কাঁকড়ার দৈহিক বৈশিষ্ট্য
শীলা কাঁকড়ার দেহের বহিরাবরণ সবুজাভ বাদামী বা নীলাভ
বাদামী রং এর শক্ত খোলস দ্বারা আবৃত। এদের পাঁচ জোড়া
পা ও দু’টি চোখ; চোখের দু’পাশে ক্যারাপেসের ওপরে ৯টি
দাঁত আছে।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে শীলা কাঁকড়ার সম্মুখের বা পিঠের
শক্ত খোলস ১৪-১৬ বার খুলে পড়ে অর্থাৎ খোলস পাল্টায়।
শীলা কাঁকড়া আকারে বেশ বড় ও ওজনে প্রায় ৩.৫ কেজি
পর্যন্ত হতে পারে।
২. শীলা কাঁকড়ার বাসস্থান
কাঁকড়া সাধারণত উপক‚লীয় মোহনায় এবং ম্যানগ্রোভ এলাকায় নরম কর্দমাক্ত তলদেশে গর্ত করে বসবাস করে। উপক‚লীয়
অঞ্চলের বিভিন্ন খালে এরা বিচরণ করে।
শীলা কাঁকড়া সাধারণত ২ পিপিটির স্বল্প লোনাপানি হতে সামুদ্রিক পরিবেশে বাস করতে পারে। সমুদ্র উপক‚ল হতে
৪০-৫০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে বঙ্গোপসাগরেও এদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
বাংলাদেশের সুন্দরবন সংলগ্ন উপক‚লীয় অঞ্চলে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, পটুয়াখালী, বরিশাল, সাতক্ষীরা, খুলনা, নোয়াখালী,
মহেশখালী, কুতুবদিয়া, স›দ্বীপ ও সুন্দরবনের দুবলার চরে এই কাঁকড়ার উপস্থিতি লক্ষণীয়। তবে খুলনা এবং চকোরিয়া
সুন্দরবন এলাকায় এদের আধিক্য বেশি।
৩. স্ত্রী ও পুরুষ কাঁকড়া সনাক্তকরণ
স্ত্রী ও পুরুষ কাঁকড়ার সনাক্তকরণ বৈশিষ্টসমূহ-
শীলা কাঁকড়ার বুকের অংশ দেখে পুরুষ ও স্ত্রী কাঁকড়া চেনা যায়, স্ত্রী কাঁকড়ার বুকের দিকে ফ্ল্যাপ দেখতে টিউবের (ইংরেজী
ট) মতো, তবে পুরুষ কাঁকড়ার ফ্ল্যাপ দেখতে কোণাকৃতি (ইংরেজী ঠ এর মতো)।
পূর্ণবয়স্ক পুরুষ কাঁকড়ার সামনের দিকের বড় চিমটা আকৃতির পা স্ত্রী কাঁকড়ার পা থেকে আকারে বেশ বড় হয়ে থাকে।
পুরুষ কাঁকড়ার ডান পা খাদ্য সামগ্রী ভাঙ্গার বা গুড়া করার কাজে, অন্য দিকে বাম পা খাদ্য সামগ্রী কাঁটার কাজে ব্যবহৃত হয়
পুরুষ কাঁকড়ার ক্ষেত্রে তার ক্রাশারের (ডান পা) ওজন স্ত্রী কাঁকড়ার চেয়ে ২.৫ গুণ বেশি হয় এবং শক্তিশালী হয়
কাঁকড়ার প্রজনন
আমাদের দেশে মার্চ-এপ্রিল মাস কাঁকড়ার প্রধান প্রজনন
মৌসুম, আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাস হলো ২য় প্রজনন মৌসুম। তবে
উপযুক্ত পরিবেশে বছরের যে কোন সময় ডিম ছাড়তে পারে।
উপক‚লীয় মোহনায় স্ত্রী-পুরুষ কাঁকড়া মিলিত হয়ে স্পনিং এর
পর হ্যাচিং এর জন্য মা কাঁকড়া ৫০ কিমি. পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে
পাড়ি জমায়। স্পনিং পরবর্তী ডিম স্ত্রী কাঁকড়ার পেটের সাথে
লেগে থাকে।
শীলা কাঁকড়ার ডিমের পরিমাণ ৩০,০০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে;
তবে প্রতিটি ২০০-২৫০ গ্রাম ওজনের স্ত্রী কাঁকড়ার ডিমের
পরিমান সাধারণতঃ ৮,৫০,০০০-১৫,০০,০০০।
একটি স্ত্রী কাঁকড়া কমপক্ষে তিনটি পর্যায়ে ডিম ছাড়তে পারে; ১ম ও ২য় বার ডিম ছাড়ার সময়ের মধ্যে ব্যবধান ৪১-৪৬ দিন
এবং ২য় ও ৩য় বার ডিম ছাড়ার সময়ের মধ্যে ব্যবধান ৩০-৩৫ দিন।
ডিম হ্যাচিং এর পর ২৫-৩০ দিন সময়ের মধ্যে ৫টি লার্ভাল ও একটি মেগালোপা পর্যায় অতিক্রম করে কাঁকড়ার পোনা বা
ক্রাবলেটে রূপান্তরিত হয়।
৫. কাঁকড়ার খাদ্যাভ্যাস
জোয়া থেকে ক্রাবলেট পর্যায় পর্যন্ত জুপ্লাংকটন/প্রাণিকণা
খেয়ে থাকে।
কিশোর ও পরিনত কাঁকড়া পানির তলদেশে চলাচলকারী
প্রাণী যেমন- ছোট ছোট কাঁকড়া, শামুক, ঝিঁনুক, কেঁচো ও
অন্যান্য মরা প্রাণী খেয়ে থাকে।
এরা খাদ্যের অভাবে স্বজাতিও ভক্ষণ করে, শীলা কাঁকড়
সাধারণত রাতের বেলায় খাবার খেতে পছন্দ করে
৬. কাঁকড়ার স্বজাতি ভক্ষণ প্রবণতা
কাঁকড়া চাষের একটি সমস্যা হলো, যখন বিভিন্ন সাইজের কাঁকড়া একই সাথে চাষ করা হয় তখন বড় সাইজের কাঁকড়া
অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের কাঁকড়াগুলোকে খেয়ে ফেলে। কাঁকড়ার এই স্ব-ভোজী প্রবণতা রোধ করার জন্য একই সাইজের
কাঁকড়া চাষ করতে হবে। কাঁকড়ার ঘনত্ব যত বেশি হয় জাতভেদে তাদের নিজেদের মধ্যে একজন অপরজনকে খাওয়ার প্রবনতা
ও তত বেড়ে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই বুঁনো কাঁকড়া হ্যাচারি উৎপাদিত কাঁকড়ার চেয়ে উগ্র তাই প্রকৃতি থেকে কাঁকড়া সংগ্রহ
সবসময় ঝুঁকি বাড়ায়। স্বজাতি ভক্ষণ জনিত সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য নিবিড় পর্যবেক্ষণ, কম ঘনত্বে একই সাইজের
কাঁকড়া মজুদ এবং প্রকৃতি থেকে সংগ্রহীত কাঁকড়া কম ব্যবহার করা দরকার।
